সাইপ্রাস শান্তি অভিযানের সময় ছবিটি তুর্কি সৈনিকের ভুলে যাওয়া শরীরটি দেখানো হয়েছে। সামাজিক মিডিয়া (Social Media) এই ছবি প্রকাশ পায়। ৭ ই আগস্ট, ২০১৭ এ ফেসবুকে আপলোড করা ছবিটি চার হাজার মানুষ শেয়ার করেন । একইভাবে , ৮ ই আগস্ট পর্যন্ত ৩০০০ লাইক পেয়েছিল।

এটি একটি মডেল সৈনিক, যেখানে একটি জার্মান সৈনিক কে দেখানো হয়েছে। মিলিটারি মডেলিং পত্রিকার ৪৭ তম ইস্যুতে মডেল স্টাডি সম্পর্কে তথ্য আপনি পেতে পারেন। ২০১৭ সালে মডেল তৈরি করেছেন দিলীপ সরকার, লিখিত নিবন্ধে, মডেলের পদক্ষেপও রয়েছে ।
Military-Modelling-Volume-47-Issue-2-2017
https://teyit.org/wp-content/uploads/2018/08/Military-Modelling-Volume-47-Issue-2-2017.pdf
উপরে যে PDF এর প্রবন্ধে, মডেলটি নির্মাণের প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং দেখা যায় যে ব্যবহৃত কঙ্কালটি প্রকৃত কঙ্কাল নয়। দিলীপ সরকার বলছে, তিনি শপিং সাইট ই-বে থেকে কঙ্কাল এবং গোলাবারুদ নির্মাণের জন্য স্টাইরফোম ব্যবহার করেছেন। প্রোজেক্টটি শেষ করার পরে, দিলীপ সরকার এই শিল্পটি বা এই মডেলটিকে সকলের সামনে আনেন এবং এতা আসল কি না তা পাঠকের উপরে ছেড়ে দেন।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ফেসবুকের একটি গ্রুপে দিলীপ সরকার এটি পোষ্ট করেছিলেন, লিঙ্ক নিচে দেওয়া হল।
https://www.facebook.com/groups/weatheredmodels/permalink/928522643964323
এই বিষয়ে নিয়ে Onay.org এ মডেলের প্রযোজক দিলীপ সরকার বলেছিলেন-
২০১৭ সালে আমি এই মডেলটি লক্ষ করেছি যে মিলিটারি মডেলিং ম্যাগাজিনের লক্ষ লক্ষ লোক এখনও স্থলবন্দরে রয়েছে। মডেল একটি জার্মান সৈনিক প্রতিনিধিত্ব করে, একটি তুর্কি সৈনিক না।
এত পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে একটি পোষ্ট দেখে আমার মাথা ঘুরে গেলো। পোষ্টটি আমি প্রথম দেখি
Rounak Mukherjee মহাশয়ের ফেসবুক দেওয়ালে, লিঙ্ক সহ ছবি দিয়ে দিলাম।
https://www.facebook.com/rounak.mukherjee.777/posts/266203754002298

উনি তো আর এক কাঠি উপরে পউছে দিলেন। অনার পোষ্ট অনুযায়ী এটি কোন এক ভারতীয় সৈনিকের ছবি। ইতি মদ্ধে কিছু মানুষ মাথায় গোবর নিয়ে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়াতে থাকে। এটি কোন নতুন ঘটনা নয়, এর আগেও এমন ঘটনা আমারা বহুবার দেখেছি। ভুয়ো খবর অধিকাংশ সময়েই আকর্ষণীয় হেডলাইন দিয়ে বানানো হয়।
এবার আসি কাজের কথায়। কিছু পিছন পাকা, অল্প শিক্ষিত মানুষ হঠাৎ করে ফেসবুক ব্যাবহার করা শিখে গিয়েছে। তাদের নৈতিক কোন জ্ঞান বা দায়িত্ব নেই। এরা অনেকেই এক একটা পেজের অ্যাডমিন, এবং শুধু মাত্র কয়টি লাইক পাওয়ার জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়ো খবর রটায়। আর আমারা সাধারণ মানুষ ক্যাটালিস্ট (অনুঘটক) এর কাজ করি এদের এই কাজে। আমরা না দেখে, না ভেবে, অনেক সময় না বুঝেই সেটা লাইক বা শেয়ার করি। শেয়ার করার পরে আবার আমরাই মনে মনে ভাবি যে ‘আমি সামাজিগ জাগরণ করছি’। ধিক্কার সেই সব পেজ বা সংবাদ মাধ্যম কে, যারা ভুয়ো খবর ছড়ায়।
কি ভাবে বুঝবেন যে কোনটি ভুয়ো ?
১) ভুয়ো খবর অধিকাংশ সময়েই আকর্ষণীয় হেডলাইন দিয়ে বানানো হয়। শিরোনামই যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয়, তাহলে সম্ভবত খবরটিও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
২) URL এর মধ্যেই সতর্ক হওয়ার উপাদান থাকে। ভুয়ো নিউজের অধিকাংশই বিশ্বাসযোগ্য খবরের URL থেকে সামান্য কিছু অদলবদল করে প্রায় টুকে দেওয়া হয়। সাইটে গিয়ে URL চেক করে নিন।
৩) তথ্যসূত্র যাচাই করুন। কোন সূত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা হয়েছে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ মাধ্যম বা সংবাদ সংস্থা থেকে সংবাদ সংগৃহীত হয়েছে কিনা, তা যাচাই করে নিন। যদি কোনও অপরিচিত সূত্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে তবে অ্যাবাউট সেকশনে গিয়ে সে সংস্থা সম্পর্কে অবহিত হোন।
৪) তারিখ দেখে নিন, ভুয়ো খবরের টাইমলাইনের অনেকসময়েই কোনও ঠিকঠিকানা থাকে না। কোনও কোনও সময়ে তারিখও বদলে দেওয়া হয়।
৫) শেষ কথা এবং সব থেকে জরুরী, যে খবর পড়ছেন তা খুঁটিয়ে পড়ুন, এবং যদি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, তবেই শেয়ার করুন।
এটা তো সামান্য একটি ছবির কথা গেল। এমন ভুয়ো খবরে ফেসবুকের দেওয়াল ছেয়ে গেছে ভয়ঙ্কর ভাবে। আমরা অজান্তেই শেয়ার করছি অসংখ্য দাঙ্গা হাঙ্গামার ছবি যা আদতে হয়নি হয়তো। কখনো সেগুলো হয় Photoshop এর দ্বারা, কখনো বা অন্য কোন দেশের, কখনো বহু পুরোনো তথ্য এবং ছবি দিয়ে। যা মানুষের মধ্যে অজান্তেই সাম্প্রদায়িক অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। কারণ আমরা দেখি খালি মুখের কাছে তুলে দেওয়া মুখরোচক খাবার ভর্তি প্লেটটির দিকে। খাবার গুলো আসছে কোথা থেকে সেদিকে আমরাদের ভ্রূক্ষেপ নেই। হয়তো এই সব মুখরোচক খাবার ভর্তি প্লেট, ভাগাড়ের!