
পাশাপাশি দুটি শোয়ার ঘর, সেকালের ইটের পাকা বাড়ি, লাল রঙের মেঝে, সাদা চুনকাম করা দেওয়াল, মোটামোটা কালো রঙের কাঠের দরজা জানলা, উঁচু ছাদ, উঁচু বারান্দা। সামনে খোলা উঠোন, উঠোন থকে বারান্দায় উঠতে উঁচু উঁচু চারটে ধাপের সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রথমে বারান্দা, তারপর শোয়ার ঘর দুটি পাশাপাশি। দুটি ঘরের দরজার মাঝখানে যে দেওয়াল, সেখানে একটা বড় খুপরি, নাম পানের সাজির জানলা। বারান্দার পশ্চিম দিকে একটি চার ধাপের সিঁড়ি, যেটা দিয়ে রান্না ঘরে যাওয়া যায়। আমার বসার যায়গা এই পশ্চিম দিকের সিঁড়িতে, পা ঝুলিয়ে মা কে হ্যারিকেনের কাঁচ মুছতে দেখা।

হাত বাঁচিয়ে কীভাবে হ্যারিকেনের কাচ পরিস্কার করতে হয়, তা রপ্ত হতে সময় লেগেছিল আমার প্রচুর। হ্যারিকেনের কাচ পরিস্কার শেষ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঝুপ করে সন্ধ্যা আর সন্ধ্যাবেলায় হ্যারিকেনের আলোয় বই খুলে বসলেই আমার দারুন ঘুম পাওয়া শুরু, অথচ মা জননী নাছোড় বান্দা, রান্না ঘর থেকে চিল্লিয়ে ডাকতেন, “কী রে পড়া বন্ধ কেন?”, ব্যাস, আবার উচ্চস্বরে মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে পড়া শুরু। আহা, সেই সব দিনগুলো। রাত গাঢ় হয়ে আসার সাথে সাথেই রান্না ঘর থেকে রান্নার সুগন্ধ, ঘুম আর খিদে দুজনে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতো আমার পড়ায় বিঘ্ন ঘটাবার।

আমি হাত এবং কাঁচ বাঁচিয়ে হ্যারিকেনের কাঁচ পরিস্কার করার চেষ্টায় কয়েকবার এই দুষ্প্রাপ্য ছোট কাঁচ ভেঙ্গেছি। এখন আর হ্যারিকেন ব্যাবহার হয়না, কারেন্ট এসেছে অনেক দিন। কোন এক গুদাম ঘরে হয়তো ঝুলিয়ে রাখা আছে সেই বহু পরিচিত সেই দুষ্প্রাপ্য ছোট কাঁচের হ্যারিকেন। এখন মাঝে মাঝে বড্ড মন খারাপ করে সেই হ্যারিকেনটির জন্য।